ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক মাঠের হিসাব-নিকাশ নতুন করে সাজছে। ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য ভোটের তারিখ সামনে রেখে সব দলের নেতাকর্মীরা সরব হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষ এবার নিজেদের মত প্রকাশে মুখিয়ে আছেন।
ভোটের মাঠের বর্তমান পরিস্থিতিঃ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের সাত আসনের মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল পাঁচটি, আওয়ামী লীগ দুটি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি দুটি আসনে জয়ী হয়। তবে আওয়ামী লীগ ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে সদরসহ বেশ কয়েকটি আসনে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে জেলার মোট আসন সংখ্যা ছয়টি। কিশোরগঞ্জে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী কোনো আসনে জয়ী হতে না পারলেও দলটির সাংগঠনিক অবস্থান শক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ছয়টি আসনেই একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
বিএনপিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি; কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অর্ধডজনের বেশি। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক স্পেশাল জজ ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ.ঈ.ম. ওয়ালী উল্লাহ রাব্বানী (দীর্ঘদিন প্রকাশ্য রাজনীতির বাইরে থাকলেও সম্প্রতি তার সমর্থকেরা বড় শোডাউন করেছেন), জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার আতিকুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ আবু তাহের মিয়া এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্টের যুগ্ম সম্পাদক মো. ওমর ফারুক। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তারা সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন, গণসংযোগ চালাচ্ছেন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।

জামায়াত ও গণ-অধিকারে একক প্রার্থীঃ অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সাবেক নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক ভূঁইয়াকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গণঅধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও মিডিয়া সমন্বয়ক আবু হানিফ প্রার্থী হচ্ছেন এবং নিয়মিত মাঠে কাজ করছেন।

অন্যন্য দলের অবস্থানঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনয়ন দিয়েছে প্রফেসর মাওলানা আজিজুর রহমানকে। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা হিফজুর রহমান খান এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ জামীকে। অন্যদিকে জাসদ (রব) ও বামপন্থি দলগুলোর তৎপরতা এখনো তেমন চোখে পড়ছে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
অতীতের হিসাব-নিকাশঃ
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬১ হাজার ৪১৩, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। সদরকেন্দ্রিক হওয়ায় আসনটি সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে অতীতে বিজয়ী হয়েছেন— ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ১৯৭৯ সালে বিএনপির ডা. ফজলুল করিম, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মো. আলমগীর হোসাইন, ১৯৯১ সালে বিএনপির মাওলানা আতাউর রহমান খান, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ডা. জাকিয়া নূর লিপি।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেন, “যারা আন্দোলনের মাঠে ছিলেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং ক্লিন ইমেজের, তাদের মধ্য থেকেই দল প্রার্থী দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য আমরা নিয়মিত মাঠে কাজ করছি।”
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা এবার সুসংগঠিতভাবে মাঠে নামছি। আশা করি জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। সেই লক্ষ্যেই নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।”
গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী আবু হানিফ বলেন, “স্বাধীনতার পর মানুষ দুই দলের শাসনই দেখেছে। এখন তারা পরিবর্তন চায়। কালো টাকা ও পেশিশক্তির রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ নতুন নেতৃত্বকে বেছে নেবে— আমি আশাবাদী।”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের মাঠ নিয়ে আয়োজন করা বিশেষ প্রতিবেদনে আগামীকাল থাকছে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন।
