শুধু হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েই কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্নের অভিযোগ ওঠেছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালের বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চরম দূভোগে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার জানান, হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য উনি (পিডিবি কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুর রউফ) নিজে আসছে ও চিঠিও দিয়েছে। এ বিষয় আমরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি এতো টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দটা আমরা পায়নি। জুন মাসতো প্রাই শেষ ৬/৭ দিনের ব্যাপার নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ আসলে দিতে পারবো, কিন্তু এইটুকু ধৈর্য্য ধারন তিনি করেননি। তিনি গতকালকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছেন। আমার ২৪ বছরের কর্মজীবনে এই প্রথম পাইলাম হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় তিনি জানান, এই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারনে ডায়াগনস্টিক বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, জরুরী বিভাগসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের।

এ বিষয়ে পিডিবি কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে পিডিবি’র আট মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যার টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছিল। পরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের লিখিত আশ্বাসে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সংযোগ দেয়া হয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে রোগী ও স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
হোসেনপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন শাহ অনিক বলেন, হাসপাতালের মত এত সেনসেটিভ একটি প্রতিষ্ঠানের হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কিভাবে করতে পারে? তখন যদি ওটি জরুরী কোন রোগী থাকত তার প্রণওতো যেতে পারত? তবে এতটাকা কিভাবে বকেয়া থাকে এর দায়ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের নিতে হবে।
হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের কৃষক বাদল মিয়া এসেছেন তার ছোটভাইকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে, তিনি বলেন, ফজরের সময় রওনা দিছিলাম, ১২ডা বাজতাছে হাসপাতলো কারেন্ট নাই, চিকিৎসাও বন্ধ। হাসপাতালের লািন কাইট্টে দেয হেইডাতো বাপের জন্মেও শুনি নাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ শহীদ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাছে লাখ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে কোন একশন নেয় না। আর আমাদের এখান থেকে বলা হয়েছে দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু শুনে নাই। আমরা তো মন্ত্রণালয় জানিয়েছি, সেখান থেকে টাকা পেলেই তো দিয়ে দেব। কিন্তু এত এত ভোগান্তি যে হল, বিনা নোটিশে লাইন কেটে দিল, এর দায়ভার কি পিডিবি নিবে?
একদিকে আট মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, অন্যদিকে প্রাণ বাঁচানোর শেষ আশ্রয় একটি হাসপাতাল—এই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত জিতলো ‘বকেয়ার কাগজ’, হারলো রোগীর জীবনসেবা। প্রশ্ন উঠেছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের—এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল? আর এমন ভয়াবহ পরিণতির দায় কি শুধু হাসপাতালের, নাকি সমানভাবে পিডিবিরও?
