ঢাকাশনিবার , ৫ জুলাই ২০২৫
  1. অষ্টগ্রাম
  2. ইটনা
  3. কটিয়াদী
  4. করিমগঞ্জ
  5. কুলিয়ারচর
  6. কৃষি
  7. খেলাধুলা
  8. তাড়াইল
  9. নিকলি
  10. পর্যটন
  11. পাকুন্দিয়া
  12. বাজিতপুর
  13. বিনোদন
  14. ভৈরব
  15. ভোটের বাঁশি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বর্ষায় পানির রাজ্যে বন্দি হাওরবাসী: জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ

প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৫, ২০২৫ ২:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ছোটন কবীরঃ বর্ষা এলেই কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ হাওরাঞ্চলের চিত্র বদলে যায়। যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। মাঠভরা হাওর রূপ নেয় বিশাল জলরাশিতে। প্রকৃতির এই নিয়মিত আবর্তনে হাওরের রূপ বদলে গেলেও, হাওরবাসীর জীবনে শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবিকা—সবকিছুতেই আসে বড় পরিবর্তন।

বোরো ফসল ঘরে ওঠার পরপরই শুরু হয় বর্ষার পানি প্রবাহ। তখন হাওরবাসীর জন্য তেমন কোনো কাজ থাকে না। ফলে অধিকাংশ মানুষ অলস সময় পার করেন, কেউ কেউ আবার মৌসুমি পেশায় যুক্ত হন। কেউ ধান কিনে বড় নৌকায় করে ভৈরব বা আশুগঞ্জে বিক্রি করেন, কেউ যাত্রীবাহী নৌকা চালান, কেউ মাছ ধরায় নামেন। আবার অনেকে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়।

বর্তমানে হাওরের চারপাশে জলাবদ্ধতা থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ, বাজার করা কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে শহরে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এমনকি শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করেই স্কুলে যাতায়াত করে। বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হাওরবাসীর জীবন হয়ে পড়ে আরও দুর্বিষহ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইটনা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট যাত্রীবাহী নৌকায় মানুষ চৌগাঙ্গা বাজারে আসছেন। এসব নৌকার অধিকাংশ যাত্রী নারী ও শিশুরা হলেও, নৌকাগুলোর অধিকাংশেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

চিকিৎসার প্রয়োজনে কিশোরগঞ্জ শহরে রওনা হওয়া কুর্শি গ্রামের কল্পনা বেগম বলেন, “নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। সময় এবং টাকার অপচয় হয় ঠিকই, তবে কোনো উপায়ও নেই।”
নৌকা চালক হরজিক মিয়া বলেন, “মানুষ এখন সময় বাঁচাতে চায়। তাই তারা দ্রুত যাত্রা করতে চান। কিন্তু কম যাত্রী নিয়ে বড় নৌকা চালালে লোকসান হয়। তাই বাধ্য হয়ে ছোট নৌকায়ই যাত্রী বহন করতে হয়, এতে একটু ঝুঁকি থাকলেও যাত্রীরা রাজি থাকেন।”

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নৌ দুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ এড়াতে যাত্রীবাহী নৌকা ও ট্রলারে যাত্রীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

প্রাকৃতিক মাছ সংকটে উদ্বিগ্ন হাওরবাসী

এদিকে জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি হাওরবাসীর আরেকটি বড় উদ্বেগ দেশি মাছ রক্ষা নিয়ে। এলাকাবাসীর দাবি, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নতুন পানিতে দেশি মাছ ডিম দেয় এবং পোনামাছ জন্মায়। কিন্তু মৌসুমি জেলেরা ক্ষতিকর জাল ব্যবহার করে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরছে। এতে ভবিষ্যতে হাওর থেকে দেশি মাছ একেবারে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, “আমরা মাছের জগতে বাস করলেও নিজেরাই ভালো মাছ খেতে পারি না। হাওরে মাছ কম থাকায় জেলেরা বেশি লাভের আশায় শহরে মাছ বিক্রি করে দেয়। যদি ছোট মাছ ধরা বন্ধ থাকতো, তাহলে তা বড় হয়ে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলার চাহিদাও পূরণ করতে পারতো।”

এই বিষয়ে ইটনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, “উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিকর জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। অবৈধ জাল জনসমক্ষে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেলেদের জরিমানা করা হয়।”

সমাধানে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

হাওরাঞ্চলের মানুষ প্রতি বছরই একই ধরনের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নিরাপদ নৌ চলাচল, দেশি মাছ সংরক্ষণ ও মৌসুমি পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। এ ছাড়া হাওর এলাকায় বর্ষাকালীন নৌচলাচলে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন এবং মাছ রক্ষায় আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন হাওরবাসী।

বর্ষা হাওরের জন্য যেমন আশীর্বাদ, তেমনি একটি বড় পরীক্ষাও। দেশের খাদ্য চাহিদা যাদের ওপর নির্ভর করে, সেই হাওরবাসীদের জীবন যেন লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প। তাই হাওর যুদ্ধাদের রক্ষায়ও উন্নয়নে প্রয়োজন পরিকল্পিত ও মানবিক পদক্ষেপ।