দীর্ঘদিন ধরে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন কাটানো খোকন মিয়া অবশেষে পেলেন একটি নতুন ঘর। কাঠ, টিন আর পলিথিনে মোড়ানো সেই জরাজীর্ণ ঘরটি ছিল তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। বর্ষায় ছাউনি দিয়ে পানি ঠেকানো, আর শীতে ফাঁকফোকর দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া সহ্য করে জীবনের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চৌদার গ্রামের এই অসহায় মানুষটি।
কিন্তু তার সেই জীবনযুদ্ধে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ান পিতলগঞ্জ এলাকার এক তরুণ সমাজসেবক এস এম মিজানুর রহমান মামুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে খোকনের দুর্দশার কথা তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি। তার পোস্টগুলো ছড়িয়ে পড়ে নানা মহলে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য হৃদয়বান মানুষ সাড়া দেন সেই ডাকে।
অবশেষে সোমবার (৩০ জুন) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে খোকন মিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন ঘরের চাবি। দুই কক্ষবিশিষ্ট টিনের ছাউনির এই ঘরে রয়েছে শক্ত মাটির মেঝে, দরজা-জানালাসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা। প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ঘরটি তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় চার মাস।
মামুন বলেন, “বারবার পোস্ট দিয়েছি, মানুষের দরজায় গিয়েছি। কেউ সাহায্য করেছেন হাসিমুখে, কেউ আবার কটাক্ষ করেছেন। তবুও হাল ছাড়িনি। কেউ দিয়েছেন ২০০ টাকা, কেউ ৫০০০। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আজ খোকনের জন্য একটা ঘর তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘর কেবল ইট, কাঠ আর টিনের নয়—এটা মানুষের ভালোবাসা, সহানুভূতি আর একতাবদ্ধতার প্রতীক।”
মামুনের এই মহতী উদ্যোগে অভিভূত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তারা বলেন, “এই সময়ে যেখানে সবাই নিজের প্রয়োজন নিয়েই ব্যস্ত, সেখানে একজন তরুণের এমন মানবিক ভূমিকা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধরনের উদাহরণ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
নতুন ঘর পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন খোকন মিয়া। তার কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনার সুর— “জীবনে ভাবিনি এমন ঘরে একদিন থাকবো। মামুন ভাই শুধু ঘর দেননি, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যারা আমাকে সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে প্রবাসীরা—তাদের জন্য আমি আজীবন দোয়া করবো। আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।”
