সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর। রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছিল আকাশে। তবে যোগীরপাড়ের এক পুকুরপাড়ে সেদিন ছিল অন্যরকম উত্তেজনা। হাতে পলো, কোমর পর্যন্ত পানি, আর একগাল হাসি— কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরে মাছ শিকারে নেমেছিলেন প্রায় ৯০ জন মানুষ। ছোট-বড়, তরুণ-বৃদ্ধ সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন শৈশবের সেই পুরনো দিনে, যখন মাছ ধরা ছিল আনন্দের আরেক নাম।
পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দ আর কৌতূহল। কেউ কোমর বেঁধে নেমেছেন পানিতে, কেউবা পলো হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সুযোগের অপেক্ষায়। হঠাৎ কারও পলোয় ধরা পড়ল এক ঝাঁক কই, কেউবা উঠিয়ে আনলেন বিশাল এক রুই। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাস, হইচই আর করতালির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারদিক।
খোকন মিয়া নামের একজন বললেন, “অনেক দিন পর পলো হাতে নেমেছি। এই যে সবাই মিলে দল বেঁধে শিকার করছি, সেটা দেখে মনে হচ্ছে কোনো উৎসবে এসেছি।”
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আলফাজ উদ্দিনের মুখে খানিকটা হতাশা। বললেন, “পুকুরটা দেখে ভেবেছিলাম অনেক মাছ পাব, কিন্তু মাছ তো ধরতে পারলাম খুব কম! তবে পরিবেশটা এমন প্রাণবন্ত, তাতে মন খারাপ থাকার সুযোগই নেই।”
আশিক নামে একজন শিকারি বললেন, “এই যে আমরা সবাই একসঙ্গে পুকুরে নেমেছি, পলো চালাচ্ছি, কেউ পড়ে যাচ্ছে, কেউ হেসে উঠছে—এটাই তো আনন্দ। এই স্মৃতি ভুলার না।”
পুকুরটির মালিক কাঞ্চন মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন পাড়ে। হাসিমুখে বললেন, “দেশি জাতের মাছ রয়েছে এখানে। মানুষের আনন্দের সুযোগ করে দিতেই ফি নির্ধারণ করে শিকারের আয়োজন করেছিলাম। বেচাকেনার চেয়েও বড় কথা—এই আনন্দটা ভাগাভাগি করতে পেরেছি।”
সেদিন পুকুরের পানির সাথে মিশে ছিল মানুষের হাসি, আনন্দ আর শৈশবের স্মৃতি। পলো দিয়ে মাছ ধরা শুধু শিকারের আয়োজন ছিল না, ছিল মিলেমিশে একসাথে আনন্দ ভাগাভাগির এক অপরূপ উৎসব।
