কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার মিলেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ—১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা, সঙ্গে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা আর স্বর্ণালংকার। দানসংগ্রহের এই বিশাল অঙ্ক মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত মোট সংগ্রহ ছুঁয়ে ফেলল শতকোটি টাকার ঘর।
শনিবার ভোরে—চার মাস ১৮ দিন পর—হারুয়া এলাকার ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে দানবাক্স খোলা হয়। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় গণনা কাজ, যা দিনভর চলে উৎসবমুখর পরিবেশে। দানবাক্স ১৩টি খোলা হয়—সেখান থেকে পাওয়া যায় রেকর্ড ৩২ বস্তা টাকা! দিনশেষে অঙ্ক দাঁড়ায় ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকায়—যা পূর্বের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।
গণনায় অংশ নেন প্রায় ৫০০ জন—মসজিদ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর আগে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল, চার মাস ১২ দিনের বিরতির পর ১১টি দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা, সঙ্গে স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার সমাহার—সেই দানটাই ছিল পুরনো রেকর্ড।
পাগলা মসজিদে দান করলে মনবাসনা পূরণ হয়—এই বিশ্বাসে দেশের প্রত্যন্ত কোণ থেকে মানুষ আসেন। কেউ স্বর্ণালংকার, কেউ বৈদেশিক মুদ্রা, কেউ আবার পশুপাখি ও অন্যান্য জিনিস দান করেন।
এই দানের টাকা থেকে পরিচালিত হয় মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের যাবতীয় কার্যক্রম, পাশাপাশি দান থেকে জমা হওয়া মুনাফা দিয়ে গরিব, অসহায় ও অসুস্থদের সহায়তা, এতিমখানা ও মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে থাকে—এক ধরনের সেবা চক্র এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংগ্রহের এই সফলতায় উৎসাহিত হয়ে মসজিদ কমিটি ঘোষণা করেছে—দৃষ্টিনন্দন একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে, যেখানে একসঙ্গে ৬০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এটি হবে আধুনিক স্থাপত্যের কেন্দ্র, যেখানে থাকবে শিক্ষা ও সেবা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া ও আইটি বিভাগ।