কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১১টি রহস্যময় দানবাক্স আজ শনিবার (৩০ আগস্ট ২০২৫) সকাল ৭টায় খোলা হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ের দানে ভরা এই বিশাল দানবাক্সগুলোর প্রতি এখন গোটা দেশের, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জবাসীর, দৃষ্টি নিবদ্ধ।
এই ঘটনা দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।এর আগে, গত ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২৮ বস্তা টাকা সংগ্রহ হয়, যার গণনা শেষে রেকর্ড গড়ে পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। সঙ্গে ছিল বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ।এবার দানবাক্সগুলো খোলা হচ্ছে প্রায় ৪ মাস ১৮ দিন পর।
এবার অনেকেই আশা করছেন যে দানের পরিমাণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে ১০ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারে।সকালে দানবাক্স খোলার সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
গণনার কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ৪০০ জন, যার মধ্যে থাকবেন মসজিদ কমপ্লেক্সের মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা।পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়ন, গরিব-অসহায়দের সাহায্য, মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনা এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। মসজিদ কমিটি জানিয়েছে, এই অর্থের একটি বড় অংশ ব্যয় করা হবে আন্তর্জাতিক মানের ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’ নির্মাণে, যেখানে একসঙ্গে ৬০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া এলাকায়, নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। এই মসজিদটি বর্তমানে ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির ওপর বিস্তৃত এবং এর সুউচ্চ মিনার দূর থেকে দৃশ্যমান।
মসজিদটিতে একসঙ্গে ৬,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন, এবং নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক নামাজের ব্যবস্থা।পাগলা মসজিদের নামকরণের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক কাহিনী। জনশ্রুতি অনুযায়ী, ঈসা খাঁর বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে ‘জিল কদর পাগলা’ নামক এক আধ্যাত্মিক ব্যক্তির নামে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।পাগলা মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় ঐতিহ্য, সমাজকল্যাণ এবং মানুষের বিশ্বাসের এক অনন্য প্রতীক। সবাই এখন অপেক্ষায় আছে, এই দানবাক্স খোলার মাধ্যমে নতুন কী রেকর্ড স্থাপিত হবে তা দেখার জন্য। কয়েক ঘণ্টা পরই জানা যাবে এই দানের ফলাফল।