কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া–হোসেনপুর) আসন বিলুপ্ত করে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়াকে একত্র করে নতুনভাবে কিশোরগঞ্জ-২ আসন গঠন করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির প্রভাব দুর্বল করতেই এই আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল।
নির্বাচনী মাঠের হালচালঃ
১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে বিএনপির দাপট ছিল সুস্পষ্ট। আওয়ামী লীগের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন বাদ দিলে বিএনপি প্রার্থী চারবার এই আসনে জয় পান। সেই ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জ-২ এখনো বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় হাফ ডজনের বেশি প্রার্থীঃ
এ আসনে বিএনপির অন্তত আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এখন মাঠে সক্রিয়ভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দীন, জেলা সহ-সভাপতি আশফাক আহমেদ জুন, সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আখিল, সুইডেন প্রবাসী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি কামাল উদ্দিন, সাবেক উপজেলা যুবদল সভাপতি আহমদ ফারুক খোকন, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আল আশরাফ মামুন এবং কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ। এছাড়া বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বজলুও নিজ উদ্যোগে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জয়ের স্বপ্ন জামায়াতেরঃ অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়লকে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যান্য দলের অবস্থানঃ
এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম শফীক, খেলাফত মজলিশের মাওলানা ছাঈদ আহমদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হোসাইনীও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জনও পুনরায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অতীতের নির্বাচনী ফলাফলঃ
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পূর্বে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হলেন—১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন ধর, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আনিসুজ্জামান খোকন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মুক্তিযোদ্ধা বজলুল করিম ফালু, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল মান্নান, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নূর মোহাম্মদ এবং ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন। এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান দয়াল জয়ী হয়েছিলেন।
মোট ভোটার ও কেন্দ্রঃ
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৪, নারী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন। ভোটগ্রহণ হবে ১৭০টি কেন্দ্রে, মোট বুথ ১ হাজার ৩০টি।
বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন বলেন, “হাসিনার আমলে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে গেছি, হামলা-মামলা সহ্য করেছি। আশা করি দল ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করবে।” রুহুল আমিন আখিল বলেন, “দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকেছি। আমার বিশ্বাস, এবার দল আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।” আহমদ ফারুক খোকন বলেন, “দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই বিবেচনায় আমি আশাবাদী যে দল আমাকে সুযোগ দেবে।”
জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, “এই আসন থেকে জামায়াত কখনও সংসদ সদস্য পায়নি। এবার জনগণের সমর্থনে ইতিহাস গড়তে চাই। সাংগঠনিক কার্যক্রম ও গণসংযোগ জোরদার করা হয়েছে।”
গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম শফীক বলেন, “দেশে দুই দলের পালাবদলের রাজনীতি মানুষকে হতাশ করেছে। জনগণ এখন বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে। কালো টাকা আর সন্ত্রাসের রাজনীতিকে পেছনে ফেলে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভরসার জায়গা হতে চাই।”
