কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছে একটি ভুক্তভোগী পরিবার।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কটিয়াদী উপজেলা সদরের একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলে ধরে মৃত হাজী নুরুল আমিনের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার বড় ছেলে সিরাজুল আমিন।
তিনি জানান, চানপুর ইউনিয়নের মন্ডলভোগ গ্রামের চারটি মৌজায় প্রায় ১৩০ একর জমি তাদের মালিকানায় ছিল। সেই জমিতে বরকত আল-আমিন এগ্রো কমপ্লেক্স নামে একটি মৎস্য ও কৃষি প্রকল্প পরিচালনা করছিলেন তারা। ২০০৮ সালের শেষ দিকে তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ তার ভাগ্নে মুন ও শাওনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে ওই প্রকল্প দখল করে নেয়। এরপর থেকে পরিবারটি এলাকা ছাড়া হয় এবং প্রাণনাশের হুমকিতে নুরুল আমিন দেশত্যাগে বাধ্য হন।
২০১২ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমি ফেরতের আবেদন করলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে দাবি করেন সিরাজুল আমিন। পরে আদালতে মামলা করলে ২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জ আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা জমি থেকে শত কোটি টাকার বালু ও গাছ বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার সময় নূর মোহাম্মদের ভাগ্নে মুনসহ কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নুরুল আমিনকে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে মামলা হলেও প্রভাব খাটিয়ে আসামিদের মুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে নুরুল আমিন মারা গেলে পরিবারকে মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক এমপির ভাগ্নে মুন ও শাওন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দরবার-শালিসের আয়োজন করলেও নূর মোহাম্মদ সেখানে উপস্থিত হননি। বরং জমির ভেতর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করে নিজের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছেন।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করলে পরবর্তীতে ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়। যদিও আদালত প্রমাণ না থাকায় তাদের অব্যাহতি দেন। সম্প্রতি এলাকাবাসী নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিলে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিরাজুল আমিন প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি ন্যায় বিচার প্রদানের আহ্বান জানান। একইসাথে পরিবারকে হয়রানি থেকে মুক্তি ও সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন।
এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এই জমি আসলে একটি কোম্পানির। তাদের ওইখানে যা জমি ছিলো তাও কোম্পানির কাছে তারা বিক্রি করে দিয়েছে।”
এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কোম্পানিকে অভিযুক্ত না করে কেন তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে? এর জবাবে নূর মোহাম্মদ বলেন, “আমার বাড়ির সামনে হওয়ায় এবং আমার ভাগ্নে কোম্পানির পক্ষ থেকে জমিগুলো দেখাশোনা করায়, আমার সাথে গোলমাল করার জন্যই কয়েকদিন পরপর এই ধরনের অভিযোগ তোলে তারা।”