রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
কিশোরগঞ্জে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, শাস্তির দাবিতে মিছিল
Avatar
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪, ৪:৫৯ অপরাহ্ন

কিশোরগঞ্জে চিকিৎসকের অবহেলায় এক শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বজন ও স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর ১২টার দিকে ‘শোকার্ত পরিবার ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী’ ব্যানারে জেলা শহরের রাকুয়াইল এলাকা থেকে বের হওয়া শতাধিক মানুষের মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যায়।

মিছিলকারীরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে আফ্ফান নামে এক শিশু মৃত্যুর অভিযোগ এনে নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমন ও অ্যানেসথেশিস্ট মো. আবু তাহের মিঞাঁর চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে জানান হয়, মারা যাওয়া সামীম ইয়াসার আফ্ফান জেলা শহরের রাকুয়াইল এলাকার বাসিন্দা ও নেত্রকোনায় বিএডিসির সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ সারোয়ার এ জাহানের (উপল) ছেলে।

গত ২৫ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টারে চার বছর সাত মাস বয়সী আফ্ফানের টনসিলজনিত সমস্যার কারণে অস্ত্রোপচার করা হয়।

পরে অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতা দেখা দিলে ঢাকার একটি হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৭ মে আফ্ফান মারা যায়।

সারোয়ার এ জাহান এর চাচা হোসেন সারোয়ার লিটন বলেন, “আফফানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল দেখে ২৫ এপ্রিল চিকিৎসক মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমন ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মো. আবু তাহের মিঞা টনসিল ও অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিতে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। অস্ত্রোপচার না করলে শিশু আফফানের চরম ক্ষতি হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

“তখন পরিবারের সদস্যরা আফফানের ঠান্ডাজনিত সমস্যার কথা জানিয়ে দুটি অস্ত্রোপচার একত্রে চলবে কি না জিজ্ঞাসা করলে চিকিৎসকেরা জানান অস্ত্রোপচার করা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর থেকেই আফফানের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় জানিয়ে সারোয়ার লিটন বলেন, “ওইদিন রাতেই আফ্ফানকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শিশুটিকে আর মায়ের কোলে ফেরানো যায়নি।

“ভুল চিকিৎসার কারণেই এ বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা পরিবার ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে দুই চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছি। যেন চিকিৎসকদের অবহেলায় আর কোনো মা-বাবার কোল খালি না হয়।”

শিশুটির বাবা সারোয়ার জাহান উপল ও মা আফসারা মুনা বলেন, দুই চিকিৎসকের অবহেলা ও অদক্ষতাসহ ভুল চিকিৎসার কারণেই আফ্ফানের অকাল মৃত্যু হয়েছে।

সন্তানের এই মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে তারা বলেন, চিকিৎসকদের বলা হয়েছিল তাদের ছেলের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তারপরও তারা অপারেশন করেছে। এই চিকিৎসকদের জন্যই ছেলে তাদের মধ্যে নেই।

সন্তানহারা এ দম্পতি চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক মুহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, “টনসিল ও অ্যাডিনয়েড রোগের লক্ষণই সর্দি-কাশি। আর টেস্টের রিপোর্টে নিউমোনিয়া ছিল না। নিউমোনিয়া থাকলে আমরা অপারেশন করতাম না।”

একই কথা বলেছেন অ্যানেসথেসিস্ট আবু তাহের মিঞাঁ। তিনি বলেন, “আমরা যে রিপোর্ট দেখেছি সেইখানে শিশুটির নিউমোনিয়ার কোনো লক্ষণ ছিল না।”

সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, “আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”

লিখিত অভিযোগ প্রদানের সময় আফ্ফানের পরিবারের সদস্য ছাড়াও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন ইদুসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত
ফেইসবুক পেইজ