কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত সৈয়দ নজরুল চত্বর সন্ধ্যায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি এই আড্ডাস্থলটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হন। ক্লান্ত দিনের অবসান ঘটিয়ে কিছুটা সময় আড্ডা, গল্প, হাসি-আনন্দে কাটাতে তারা ছুটে আসেন এই চত্বরে। আর এই আড্ডার প্রাণ হয়ে ওঠেন চা বিক্রেতা মোঃ মশিউর রহমান জনি।
সৈয়দ নজরুল চত্বরে জনির ছোট্ট টং দোকানটি যেন আড্ডার এক আলাদা স্বাদ যোগ করে। এখানে আসা মানুষদের আড্ডায় তার তৈরি গরম চা আর আন্তরিক ব্যবহার যেন প্রাণের সঞ্চার করে। তিন বছর ধরে এই চা বিক্রি করে জনি এখন এই আড্ডা স্থল এর নিয়মিত নাম। শুধু এক কাপ চা-ই দেন না, বরং আড্ডায় থাকা মানুষদের কাছে হাসিমুখে একটি পরিবেশন যোগ করেন। স্থানীয়দের কাছে জনির চা মানে শুধু চা নয়, বরং এক মুহূর্তের জন্য জগতের সব ব্যস্ততা ভুলে কিছুটা প্রশান্তির সময়।
জনি বলেন, “প্রথমে শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য চা বিক্রি শুরু করেছিলাম। মাঝে মাঝে শারীরিক অসুস্থতা কিংবা পারিবারিক কাজে যদি দোকান না খুলতে পারি পরেরদিনই আমার চায়ের কুটুমরা এসে জিজ্ঞেস করতে থাকে, অনেকে আবার ফোন দিয়েও জিজ্ঞেস করে কেন আমার দোকান বন্ধ। তখন মনে হয়, আমার এই ছোট্ট দোকানটা এখানে আসা অনেকের জন্য কিছুটা মানসিক শান্তির জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমিও যখন বাড়িতে থাকি “জনি ভাই পাঁচটা চা দেও” এই ডাকটাকে খুব মিস করি। সবার সঙ্গে একটু কথা বলে ও এক কাপ চা পরিবেশন করতে আমার ভালোই লাগে।”
সৈয়দ নজরুল চত্বরে আসা এক নিয়মিত ক্রেতা বলেন, “এই চত্বরে আড্ডার আসল মজা জনির চায়ে। সে শুধু চা দেয় না, ওর সঙ্গে একটু কথা বললেও মনটা ভালো হয়ে যায়। আড্ডা জমানোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ চা, জনি ভাই এর চাটা যদি না থাকতো আমাদের আড্ডার বিঘ্ন ঘটতো দূর থেকে গিয়ে চা খেয়ে আসতে হতো। তখন সেই আড্ডারও ছন্দপতন হতো। তাই বলা যায় তার চা ছাড়া এই চত্বরে আড্ডা জমে না। “
জনির প্রতিদিনের আয়ে চলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফা পান তিনি, যা দিয়ে তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়।
নরসুন্ধা নদীর পাড়ের সৈয়দ নজরুল চত্বরটি শহরের মানুষের সন্ধ্যাকালীন আড্ডার প্রিয় স্থান, যেখানে জনির চা এক কাপের মধ্যেই এনে দেয় বহু সম্পর্কের উষ্ণতা ও স্মৃতির ছোঁয়া।