দিলোয়ার হোসেন: বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবি), কিশোরগঞ্জ।
রোববার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী ক্যাম্পাস থেকে একটি র্যালি বের হয়ে শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যায়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলী, রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, রোভার স্কাউটের সদস্য, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস (বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ) এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল।
এছাড়াও বশেমুরবি’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ তুলে ধরে বলেন, “বঙ্গবন্ধু প্রথমে সাম্রাজ্যবাদ ব্রিটিশ ও পরে ঔপনিবেশ শাষণের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে গেছেন। ব্রিটিশরা এদেশের তাঁতিদের বুড়ো আঙুল কেটে দেয় যাতে মসলিন কাপড়ের তাঁত বুনতে না পারে। এতে ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিতে পারবে ব্রিটিশরা। লবণ উৎপাদনেও দেয় বাঁধা। বঙ্গবন্ধু এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল আরও বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা না বলে সেজন্য ভারত উপমহাদেশে ধর্ম বিভাজনের মাধ্যমে বাংলায় বাঙালিদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে তারা। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়েও ধর্মের ভিত্তিতে বিবাদ সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু তখন হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান সবাইকে একত্র রাখতে ও দাঙ্গা রুখতে বাংলা ভাষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এর ফলেই পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ এ বঙ্গবন্ধু অনশন শুরু করেন এবং তাঁর পরামর্শে ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল হয়। পুলিশের গুলিতে তখন অনেকে শহিদ হন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা মর্যাদা পায়। মুক্তিযুদ্ধেও তিঁনি অসামান্য অবদান রাখেন। ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ গ্রেফতারের আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন “ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে সর্বজনতা ঝাপিয়ে পড়ে ও ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধস্ত দেশ গড়ার কাজে হাত দেন। সে সময়ে কৃষি খাতেই সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়া হয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য। আর এ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তিনি শিক্ষাখাতেও বেশি বরাদ্দ দেন।
“বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ থেকে আমরা কী শিখতে পারি ও তাঁর ছাত্রজীবন কেমন ছিল?“ এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেন। এতে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। বঙ্গবন্ধু সে জরিমানা অন্যায় আখ্যায়িত করে জরিমানা দেননি।পরে তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। তবুও বঙ্গবন্ধু সত্য, ন্যায় থেকে পিছু হটেননি। সাহসের সাথে কাজ করেছেন।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল আরও বলেন- বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু হওয়ার পিছনে মূল ছিল শেখরের সাথে বন্ধন। তিঁনি চারপাশের মানুষের দুঃখ, কষ্ট দেখেছেন।আবার কলকাতা শহরে পড়ার সময় নগরের উন্নত জীবনও দেখেছেন। সে থেকেই অন্যায়,অত্যাচার বুঝেছেন এবং মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সংগ্রাম করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু এভাবে সবার পাশে থেকেছেন। এভাবেই তিঁনি সবার বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন।
প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা শেষে অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বশেমুরবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলী তার আলোচনায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব ভালোবাসতেন এবং তাঁর জন্মদিনে তিঁনি শিশুদের সাথে কাটাতেন। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করে আমাদেরকে স্মার্ট, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মান করতে হবে।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন বশেমুরবি’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।