আজ ২৩ অক্টোবর। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনার ১ বছর। ২০২৩ সালেরঔ এই দিনে স্টেশনের আউটার সিগন্যালে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে যাত্রীবাহী দুটি বগী দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে প্রাণ হারান নারী-শিশুসহ ১৯জন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্বও বরণ করেন দূর্ঘটনায় আহতদের অনেকে। স্মরণকালের বীভৎস এই ট্রেন ট্র্যাজিডির ১বছর পেরিয়ে গেলেও দূঘর্টনায় নিহত ৯টি পরিবার উপযুক্ত কাগজপত্রের টানাপোড়েনে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা আজও হাতে পায়নি।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ঘটনার দিন দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে ভৈরব থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর গৌধুলি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে স্টেশনের ২ নম্বর পার্টফর্মের ৩ নম্বর লাইন ক্রস করে ১ নম্বর লাইনে যাওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। একই সময়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটিকেও স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মের ১নম্বর লাইনে প্রবেশের সংকেত দেওয়া হয়।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে যাত্রীবাহী এগারোসিন্দুর ট্রেনের পিছনের দুটি বগি ছাড়া বাকি বগিগুলো ক্রস করে পয়েন্ট অতিক্রম করে। শেষের ২ বগি ক্রস পয়েন্ট করার সময় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটিও ক্রস পয়েন্টে ঢোকে। তখনই এগারোসিন্দুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগির সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় যাত্রীবাহী ওই দুটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত হয় আরো শতাধিক যাত্রী। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ক্ষতিপূরণ বাবদ নিহতদের প্রত্যেকের জন্য ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর জুন মাসে নিহত ১০ জনের পরিবারের মাঝে অনুদানের চেক হস্থান্তর করা হলেও বাকি নিহত ৯ জনের পরিবার দূঘর্টনার ১ বছর পেরিয়ে গেলেও উপযুক্ত কাগজপত্রের অভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, উপযুক্ত কাগজপত্র সময় মতো যাচাই-বাচাই করতে না পারায়, বিলম্ব হয়েছে। সঠিক তথ্য সাপেক্ষে রেল মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত অনুদানের টাকা চলতি অর্থবছরে প্রদান করা হবে।
দূঘর্টনায় নিহত একব্যক্তির ভাই মালবাহী ট্রেনের চালক ও গার্ড এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতোমধ্যে তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল প্রক্রিয়াধীন।
ভৈরব বাজার রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাষ্টার মো. ইউসুফ বলেন, সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা ১৯। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহতদের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে প্রদান করার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ১০টি পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। বাকি ৯ জনের কাগজপত্র যাচাই সাপেক্ষে অতি শীগ্রই তাদের হাতে সরকারি এই অনুদানের টাকা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে দূর্ঘটনারয় জন্য আজও শোকাহত। ক্ষতিপূরণের মতো আমাদের ভাষা নেই। আজকের দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে আমরা শোক সভা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছি।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন, দূর্ঘটনার দিন আমাদের দপ্তর থেকে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের তথ্য চাওয়া হয়। তখন ১০ জনের সঠিক তথ্য পেয়েছিলাম। ১০ জনের তথ্যমতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা প্রতি পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে প্রদান করি। বাকি ৯ জনের মধ্যে কয়েকজনের তথ্য পেয়েছি। বাকিদের তথ্য সাপেক্ষে বর্তমান অর্থবছরে ৯ জনের পরিবারের হাতে অনুদানের টাকা হস্থান্তর করা হবে।
ভৈরব রেলওয়ের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলীম হোসেন সিকদার বলেন, নিহতদের পক্ষ থেকে মৃতের এক ভাই আমাদের থানায় মামলা দায়ের করলে রেল কর্তৃপক্ষের তদন্তের মাধ্যমে মালবাহী ট্রেনের চালক ও গার্ডকে দোষী সাবস্ত্য করা হয়। মামলাটি তদন্তধীন আছে এবং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।