শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
কিশোরগঞ্জে তিনদিন ব্যাপী ছড়া উৎসব ও চন্দ্রাবতী মেলা শুরু
এসকে রাসেল
/ ১২১ ভিউ
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪, ১:৫৮ অপরাহ্ন

আমরা বাঙালি আমরা মুক্ত, সীমানা ছাড়িয়ে অন্তরে যুক্ত। এই প্রতিপাদ্যে তিনদিন ব্যাপী ২০তম কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব ও চন্দ্রাবতী মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে পৌর শহরের স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে বর্নাঢ্য র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী যাত্রা শুরু হয়।

তিনদিনব্যাপি এই মেলায় কবিতা আবৃত্তি , স্বরচিত ছড়া পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। উৎসবে অংশ নেওয়া লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা জানান, সারা বছর অপেক্ষার পর অনুষ্ঠানস্থ প্রানের মেলায় পরিনত হয়।

এবারের উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, রাশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের অর্ধশতাধিক কবি, ছড়াকার ও সাহিত্যিকরা অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবছর মার্চ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রতিবার দেশ-বিদেশের কবি ও সাহিত্যিকরা উপস্থিত থাকেন

স্থানীয় লেখক তানজিনা কবির প্রিয়া বলেন, সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠন জেগে ওঠো নরসুন্দা এই ছড়া উৎসবের আয়োজন করে থাকে। ২০ বছর যাবত এই অনুষ্ঠানটি সুনামের সহিত দেশী-বিদেশী কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে দুই বাংলার মিলন মেলায় পরিণত হয়। দেশের বাহির থেকে আসা কবি সাহিত্যিকদের এই আগমনে সাহিত্যের অনেক কিছু জানা যায়। আদান-প্রদানের মাধ্যমে সাহিত্যের নতুন মাত্রা যোগ হয়। এই উৎসবটি স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের অনেক গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে।

ভারতের হুগলি জেলার কলকাতা থেকে আসা কবি নমিতা দেব জানান, এই প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব ও চন্দ্রাবতী মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। সাহিত্যের এতো সুন্দর আয়োজন আমাদের আবেগ আপ্লুত করেছে। আমাদের ভারতের সঙ্গে এই বন্ধনটা আরো দৃঢ় হোক। আমরা যেই সাহিত্য নিয়ে কাজ করি এই বাংলার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারলে আমরা অনেকবেশি ধন্য হবো সমৃদ্ধ হবো। এই বন্ধনটা আরও সুদৃঢ় হবে। এইরকম ছড়া উৎসব এর আগে কখনও দেখা হয়নি।

ভারত থেকে আসা কবি নিশীথ বরণ সিংহ রায় বলেন, এর আগে ২০২২ সালে আমি এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলাম। এখানকার মানুষের আন্তরিকতা আমাকে মুগদ্ধ করেছে। আমরা ভারতীয় বাংলা ভাষা-ভাষী সবসময় সব বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে একাত্বতাবোধ করি। এখানে শুধু কাঁটা তারের বেড়া এছাড়া আর কোন দুরত্ব আমাদের নেই। আমরা প্রাণের টানে বাংলাদেশে আসি। শুধু দেশটার নাম ভারত আর বাংলাদেশ শুধু নামে ব্যবধান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে বলা যায় কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব ও চন্দ্রাবতী মেলা দুই বাংলার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

তারাশংকর চক্রবর্তী বলেছেন, কিশোরগঞ্জের মাটি সাহিত্যের জন্য উর্বর। এই মাটিতে সত্যজিত রায়, উপেন্দ্র কিশোর রায়, সুকুমার রায়, কবি চন্দ্রাবর্তীদের মতো ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছে। এখানে এসে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।

নেপাল থেকে আসা কবি রাজেন্দ্র গোরাগাই বলেন, আমি বাংলাভাষি নয়। বাংলাকে ভালোবেসে অনেক কষ্ট করে বাংলা ভাষা শিখেছি। এদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি আমাকে কাছে টানে। আমি তার প্রেমে পড়েছি। ওইখানে (নেপালে) আমি অনেককেই বাংলাভাষা শিখিয়েছি। আমাদের বন্ধু দেশ বাংলাদেশ। কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসবে নেপাল থেকে ৬জন এসেছি। কিশোরগঞ্জের ছড়া উৎসবের মাধ্যমে আমি বাংলাকে আরও বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।

ছড়া উৎসব পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক আহমেদ উল্লাহ বলেন, ২০বছর যাবৎ আমরা জেলার সর্ববৃহৎ এই সাহিত্য আসরটি করে আসছি। আমাদের উদ্যেশ্য শিল্প-সাহিত্যে সুস্থ-সুন্দর ধারা অব্যাহত রাখা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছড়া উৎসব পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক আহমেদ উল্লাহ’র সভাপতিত্বে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, ভূটানের কবি ছত্রাপাতি ফুয়েল, নেপালের কবি রাজেন্দ্র গোরাগাই, ভারতের শিশু সাহিত্যিক স্বপন কুমার রায়, ঢাকার কবি ফাতেমা হক, ছড়া উৎসব পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব আবুল কাশেম উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত
ফেইসবুক পেইজ