কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ডুবি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়ার দুই কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় তায়েবা আক্তার (২২)। তিনবছর আগে বিয়ে হয়েছিল জেলা সদরের লতিবাবাদ চরপাড়া এলাকার মৃত রুস্তম আলী বেপারীর ছেলে হাবিবুর রহমানের সাথে। পারিবারিক ভাবে বিয়ের পর গত ২২ মাস আগে তাদের সংসারে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে গত ৩০ জুন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়ে পরপারে পারি জমিয়েছেন তায়েবা।
তায়েবার বাবা বলেন, তায়েবা খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। বাবা মায়ের অনেক আদরের হওয়ায় বিয়ের সময় স্বামীর সংসারে সুখের কথা চিন্তা করে ঘরের আসবাবপত্রসহ নগদ অর্থ দিয়েছিলেন তায়েবার বাবা মানিক মিয়া। কিন্তু সুখের বদলে তিনবছর পর মেয়ের আত্মহত্যা দেখতে হয়েছে তাদের।
অভিযোগ, তায়েবার বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামীর সংসারে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন অজুহাতে মারধর করতে থাকে। একটা সময় বুঝতে পারে টাকার জন্য তায়েবাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। মেয়ের উপর যেন নির্যাতন না হয় তার জন্য গত তিনবছরে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা যৌতুক নেন স্বামী হাবিবুর রহমান। তুবও কমেনি নির্যাতন। সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে এসে থেকেছেন তায়েবা। এরমধ্যে কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। বাবার বাড়িতে থাকাকালিন খবর আসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন স্বামী হাবিবুর রহমান। এই খবরে গত ২৫ জুন স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন তায়েবা। সেখানে তিনদিন থাকার পর ২৮ জুন বিকেলে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেয়ে তায়েবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাবার বাড়িতে এমন খবর দেন স্বামী। এ অবস্থায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা শেষে ২৯ জুন আবারও বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয় তায়েবাকে। সেখানে তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে ধৈর্য্য ধরতে বলেন পরিবারের সদস্যরা। তারপরও যেন কোনভাবে আর মেনে নিতে পারছিলেন না। সে কারণে ৩০ জুন বিকেলে ঘরের দরজা আটকিয়ে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যা করে তায়েবা। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে নিকলী থানা পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বামী হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তায়েবার বাবা আরও বলেন, আমার মেয়ে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। যেখানে তায়েবাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে তার স্বামী। বিষয়টি পুলিশকে বলার পরও আমার মেয়ের অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। আমার মেয়ের আত্মহত্যার বিচার চাই।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, তায়েবার মৃত্যুর পর তার বাবা মানিক মিয়া বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। আমাদের কাছে বিষয়টি ওইভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ওনাদের বক্তব্য অনুযায়ী অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। যদি তারা আমাদের আত্মহত্যার প্ররোচণার কথা বলতেন তাহলে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মামলা নিয়ে নিতাম। অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে যে বিষয়টি শেষ তা না। ওনারা ইচ্ছা করলে সদর থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনায় অভিযোগ করতে পারেন। অথবা কোর্টেও মামলা করতে পারেন। তখন কোর্ট যে নির্দেশনা দিবে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো।