রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
নিকলীর শশ্মানখলা গণহত্যার কালোরাত্রির ইতিহাস
এসকে রাসেল
/ ১০৫ ভিউ
আপডেট : শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪, ৫:০২ অপরাহ্ন

যখনি শুনি কোথাও কোনো ফায়ার কিবা আতশবাজির বিকট শব্দ,ভয়ে তখনি কেঁপে উঠে বুক। হৃদয়ে তখন বেজে উঠে একটা করুণ সুর।মনে পড়ে যায় শশ্মানখলার কালো রাত্রির ভয়াল হিংস্র থাবার কথা।যেখানে বাবা,ভাইসহ
স্বজনদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিলো।হত্যা পরবর্তী সময়ে পরিবারের রমনীদের নিয়ে অশ্লীলতায় মেতে থাকার দৃশ্য আজও ভেসে ওঠে। এমন ভয়াবহ স্মৃতিতে চোখ টলমলো জলে ভিজে।১৯৭১ সালে পাক সেনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বাদল চন্দ্র সুত্রধরের কথা।

পাক সেনাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া ১৪ বছরের কিশোর বাদল চন্দ্র সূত্রধর আজ বৃদ্ধ। তবে এখনো ভয়ে তিনি ভুলতে পারেনি সেই কালো রাতের দৃশ্য। ৩৯ জনের মধ্যে শুধু বাদল আজো বেঁচে আছে।বেঁচে থেকেও অনেকটা হতাশায় আর অভিমানে বাদল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, পাক সেনাদের হাতে মরে গেলেই ভালো হতো!এতো কষ্টের মধ্যে দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত থেকে। তিনি বলেন প্রতিদিনের খরচের সাথে আয়রোজগারের বিশাল পার্থক্য। বার্ধক্য জনিত কারনে কর্ম করে সংসার চালানো এখন আর এই যুগে সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের নাম ২২ সেপ্টেম্বর। সরেজমিনে বাদল চন্দ্র সূত্রধরের সাথে সাথে টেকপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় দেখা করতে গেলে এই দিনের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন ৬৫ বছরের সেই বৃদ্ধ বাদল চন্দ্র সূত্রধর। বাপ-চাচাসহ যৌথ পরিবারের ১২ জনকে নিশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন সেই কালো রাতে। স্মরনীয় সেই দিনটি ছিলো ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে রয়ে গেলো ১৯৭১ সালের সেই ২২ সেপ্টেম্বর। যখন মুক্তিকামী বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের তুমুল লড়াই শুরু হয় চারিদিকে তখন স্বাধীনতা অর্জনের তিন মাস আগে এই দিনে রচিত হয়েছিল নিকলীর দামপাড়া একটি ভয়ঙ্কর কালো রাতের ইতিহাস।ঐ রাতেই নিকলীর সোয়াইজনী নদীর তীরে শশ্মানখলায় পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকার কর্তৃক সংঘটিত হয়েছিল একটি বর্বর নারকীয় গণহত্যা।নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল একসাথে ৩৪ জনকে। এ গণহত্যার শিকার হয়েছিল নিকলীর সংখ্যালঘু পরিবারের ৩৪ জন নিরপরাধ পুরুষ। সেদিন তাদের রমনীরা হয়েছিলো বিধবা।সন্তানরা হয়েছিলো পিতৃহারা। পিতৃহারা শিশুদের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে পরবর্তীতে কেউ বেঁচে নিয়েছে হকারি,কাউকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কঠিন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে হয়েছে। ২২ সেপটেম্বর বেলা প্রায় ২টায় মধ্যাহ্ন ভোজের সময় দামপাড়া বর্মনপাড়া ও টেকপাড়ার স্থানীয় প্রভাবশালী তৎকালীন সময়ের চেয়ারম্যান সাহেব আলী ওরফে টেহার বাপসহ দামপাড়ার স্থানীয় কয়েক পাক সেনাদের ধূসর সেজে খবর জানায়,গ্রামের সকল পুরুষকে জরুরি ভিত্তিতে থানায় যেতে হবে। কারণ জনতে চাইলেই পাক ধুসরা জানায়, গ্রামের সকল হিন্দু পরিবারকে (ডান্ডি কার্ড) দেওয়া হবে, যাতে যুদ্ধকালীন সময়ে হিন্দুরা নিরাপদে চলাচল করতে পারে।
এমন কৌশল করেই তাদেরকে একত্রে থানায় নিয়ে আসা হয়।এদের মধ্যে শুধু ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী চারজন কিশোরকে অন্যত্র বসিয়ে রাখা হয়।এই চারজন শিশু হলেন, বাদল চন্দ্র সূত্রধর, বাদল বর্মন,সুনু বর্মন ও গোপাল চন্দ্র সূত্রধর।

পাকবাহিনীর নির্দেশে তৎকালীর ওসি মোসলেহ উদ্দিন রাজাকারদেরকে রশি দিয়ে হাত বাঁধার অনুমতি দেন,তখন তাদেরকে হাত বেঁধে রাখা হয়।চলে অন্যদের উপর অমানবিক,পৈশাচিক নির্যাতন,তখন রাত ৮ থেকে আনুমানিক ৯টা বাজে।নিকলীর যুদ্ধাতঙ্ক গ্রামগুলোতে আলোক বিহীন, ঘুটঘুটে অন্ধকারে চেয়ে গেছে চতুরদিক।নীরব নিস্তব্ধতা,যোদ্ধ আতঙ্ক তখন আলোবিহীন গ্রামে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার কলরব।মাঝে মাঝে দূর থেকে শিয়াল কুকুরের থেমে-থেমে ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যায়।


এ সময় গ্রামের খেটে খাওয়া লোকজনও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে যেতে ব্যস্ত,ঠিক সেই মুহূর্তে ৩৪ জনকে সারিবদ্ধভাবে রশিতে বেঁধে থানার অদূরে শশ্মানখোলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তারা বুঝতে পেরেছিল কি ঘটতে যাচ্ছে তাদের জীবনে। কিছুক্ষন পরেই এক ঝাঁক গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। শব্দ শুনে ভয় পেয়ে যায় চার কিশোর। গুলির প্রচন্ড শব্দে আতংক ছড়িয়ে পড়ে থানার পার্শবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যেও। থানায় আটক চারজনেরই সে সময়ে অনুমান হয়েছিল যে, “সবাইকে হত্যা করা হয়েছে” ভয়াল সেই কালো রাতের কথা বলতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠছিলেন গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া কিশোর আজকের বয়োবৃদ্ধ বাদল চন্দ্র সূত্রধর (৬৬)। সেই রাতে হত্যাকান্ডের স্থানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকাদের বেশ কয়েকজন জীবিত ছিলো। তাদের মধ্যে কামিনী বর্মনের রশির বাঁধন দাঁত দিয়ে কামড়ে খুলে দেন মনিন্দ্র সূত্রধর নামের একজন। মনিন্দ্রের কথা হয়েছিলো তার বাঁধনও খুলে দিবেন কামিনী। মনিন্দ্র সূত্রধরকে রেখেই কামিনি বর্মন রাতে ভাসমান একটি কলা গাছের উপর বুকে ভর করে সাঁতরে সোয়াইজনী নদী পার হয়ে একাকী জীবন বাঁচান। বেঁচে থাকার পরবর্তী এক যুগ সময়ে তিনি এই করুণ দৃশ্যে বর্ণনা করে গেছেন‌।কামিনী বর্মন ছাড়া ৩৪ জনের মৃতদেহ পরদিন সকাল প্রায় ৮টার সময়ে থানা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে খরস্রোতা ঘোড়াউত্রা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সেদিন রাতে প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার একজন বেলুচি সেনা অফিসার এসে তৎকালীন নিকলী থানার ওসি মুছলে উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলেন যাদেরকে বাড়ি থেকে আনা হয়েছে তারা কোথায় আছে। থানার দুইজন বড় সাহেবের মধ্যে প্রধান অফিসার ইনচার্জ মুছলে উদ্দিন বেলুচি সেনাকে বলতে লাগলেন ৪ জন শিশু ছাড়া বাকিদের খতম করা হয়েছে। এ কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে উর্দু বাংলা মিশ্র ভাষায় বলতে লাগলেন, আমরা মানুষ খতম করতে আসিনি। এসেছি মাটির দখল নিতে। সেনাদের সাথে আমাদের যুদ্ধ হবে। সাধারণ মানুষের সাথে নয়। একথা বলে ৪ শিশুকে সকালে মুক্ত করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন বড় সাহেবকে(ওসি)। ৪ জনকে খাবার দিতে আদেশ দিলেন। বাপ-চাচা, ভাই আর স্বজনের হত্যার খবর শুনে ভাত তখন পেটে যায় না। চিৎকার করে কাঁদারও কোনো সুযোগ নেই।তবুও মুক্তির আশায় ৪ জনেই কোন রকমে খেয়ে নেন। ভাতের উপর চোখের জল চোয়াল গড়িয়ে পড়তে লাগলো সকলেরই। তৎকালীন থানার ওসির বাড়ি ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পরদিন সকালে ছাড়া পেলেন চারজনই। বাড়ী ফিরে দেখে পৈশাচিক তান্ডবের দৃশ্য। ঐ রাতে স্থানীয় রাজাকার, আলবদর, আল সামস মিলে প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে লুটতরাজসহ নারীভোগে মেথে থাকার দৃশ্য বর্ণনা করতে চোখের জল ছাড়তে লাগলেন। নির্যাতিত নারীদের আর্তচিৎকারে টেকপাড়া ও বর্মনপাড়ার বাতাস তখন ভারি হয়ে উঠেছিলো। এ কথা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন বাদল চন্দ্র সূত্রধর ও সমবয়সী বাদল বর্মন। পরিবারের নির্যাতীত ও বিরঙ্গনাসহ এলাকার বহু লোক তখন নিরাপত্তার লক্ষ্যে গুরুই এলাকার তৎকালীন সময়ের মুক্তিযুদ্ধার নেতৃত্বদানকারী মোতালেব হোসেন বশুর আশ্রয় সংলগ্ন হিলচিয়াতে আশ্রয় নেন।

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির ঘোষণার পরপরই তৎকালীন সময়ে দামপাড়া এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব আলী ওরফে টেহার বাপের (৫০) বাড়ী হতে দুজন রক্ষিত নারীও মুক্তি পেলেন। সাহেব আলীর ১৯ বছরের কাছাকাছি ছেলে দুলালও তৎকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানীর ধুসর সেজে কাজ করায় শাস্তি স্বরূপে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা চেয়ারম্যানের পাপ কাজের দায় স্বরূপে ব্যতিক্রমী শাস্তিতে হত্যা করে।

এ প্রতিবেদককে তিনি আরও জানান স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গনহত্যায় নিহতদের পরিবার “শহীদ পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি” তাদের অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত লোকও সম্মানী ভাতা পাচ্ছে কিন্তু গণহত্যায় নিহত অসহায় স্বজনদের খবর কেউ রাখেননি! শুধু তাই নয়,এ দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন না করায় নতুন প্রজন্মরা এই দিবসটি সম্পর্কে কিছুই জানে না। চাপা পড়ে যাচ্ছে কালো রাতের সেই ইতিহাসের কথা।

সরেজমিনে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিহতদের পরিবারের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে দিবসটি পালন করে আসছে নিহতের ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা।

যাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তারা হলেন, সুধীর সূত্রধর, শিরীষ সূত্র, মনিন্দ্র সূত্রধর, আরাধন সূত্রধর, কার্তিক সূত্রধর, অবিনাশ সূত্রধর, মধু সুদন সূত্রধর, নীতিশ সূত্রধর, ক্ষিতিশ সূত্রধর, সুরেন্দ্র সূত্রধর, বনবাসী সূত্রধর, সুনীল সূত্রধর, অনিল সূত্রধর, অমূল্য চন্দ্র পাল, মোহনবাসী বর্মন, জগৎবাসী বর্মণ,অভয় বর্মণ, যোগীন্দ্র বর্মণ, যতীন্দ্র বর্মণ, রজনী বর্মন, রসিক বর্মন, প্রহলাদ কুড়ি, কৃষ্ণকুড়ি, জ্ঞানচন্দ্র কর্মকার, গজেন্দ্র কর্মকার, গৌরহরি কর্মকার, বিনোদ চৌধুরী, অনুকূল রায়, হীরেন্দ্র মোদক, গোকূল শাহা, হীরেন্দ্র শাহা, যোগেশ সূত্রধর, সুকুমার সূত্রধর ও অবনী সূত্রধর।

পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বাদল চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রী অনিতা চন্দ্র সূত্রধর আক্ষেপে ও ক্ষোভের ভাষায় বলেন, ‘পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে বেঁচে গেলেও এখন খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে। স্বামী শারীরিকভাবে কর্মক্ষম হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলেও মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রীর কাজ পায়। সারাদিনে ৪ থেকে ৫ শ’ টাকা রোজগার করে। যা দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলে না। সব কিছুর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াতে কষ্টে আছেন বলে জানান তিনি।

এই বিষয়ে নিকলী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেনসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধোর সাথে কথা হলে তারাও আফসোসে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিকলীতে ২২ সেপ্টেম্বর গণহত্যায় নিহতদের জন্য রাষ্ট্রিয় সম্মানার্থে কিছু করার দরকার ছিলো। স্মৃতি স্বরূপে না থাকলে যুগের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যত প্রজন্মরা সেই কালো রাতের ইতিহাসের কথা ভুলে যাবে। মূচে যাবে সকল স্মৃতি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, নিকলী উপজেলা শাখার সভাপতি, বিপুল দেবনাথ নিকলী শ্মশানখলায় গণহত্যার শিকার ৩৯ জন ব্যক্তির শহীদের মর্যাদা দাবী জানান। নিকলী শ্মশান খলাকে বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জানামতে নিহতের ৩৪ জন নারীই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেননি। ওরা বিধবা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে বিরঙ্গনা হয়েও মুখ খোলেননি। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান দেওয়ার আকুতি ব্যক্ত করেন।

নিকলী উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শাকিলা পারভীনের নিকটে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে যে ৩৪ জন পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে পাক সেনারা তাদের বিষয়ে কথা হলে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাসে উপর মহলকে জানানোর হবে বলেও জানিয়েছিলেন।

নিকলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোছা. পাপিয়া আক্তারকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবহিত করা হলে তিনি তথ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার সাথে কথা বলে সরাসরি অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ প্রদান করেন।

সম্পর্কিত
ফেইসবুক পেইজ